রক্তচোষা ও একটু তামাকপাতা

ভদ্রোলোকটির বৈজ্ঞানিক নাম হিরুডো মেডিসিনালিস। আমার ব্যক্তিগত মতে ইনি ড্রাকুলার এই কিলবিলে রূপ। মশা নামক আরো এক জন রক্তচোষার মাসতুতো ভাই।
 আদিকাল থেকে রক্তচোষা জোঁকেদের রক্ত জমাট বাঁধা (blood cloting) বন্ধ করার জন্য চিকিৎসায় ব্যবহার হয়েছে। তঞ্চন বন্ধ করার জন্য রক্তচোষা জোঁকের লালায় হিরুডিন নামক রক্ত জমাট রোধক(anticoagulant) পেপটাইড ক্ষরিত হয়। 

কিন্তু এইসব তত্ব আমায় টলাতে পারবে না। বিশেষত যখন পাহাড় নামক স্থানে তেনার বসবাস। বাঙালি, ফলত ফেলুদা না পড়লে মানুষ নামক জীবের গোত্রে আমি পড়ি না এই বোধে সত্যজিৎ কে বইয়ের তাকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। আরো নানা হাবিজাবি ও উচ্চ বর্ণের ও গোত্রের বই এর সাথে তাদের বন্ধুত্ব পূর্ণ সহাবস্থান ছিল। তবে , মানতেই হবে গুরু, যে যুগে নেট ছিল না আর বই ছিল তথ্য ভান্ডার , সে যুগে সত্যজিৎ এর বই মানে নানা জিনিস জানা। 
তা, সেই জানা অজানার যুগ ধরেই এলো জোঁক। ফেলুদা ,তোপসে, জটায়ু অপরাধী ধরতে যাবে ,সাথে বন্দুক গোলাগুলির থেকে ও বেশি দরকারি কি? না তামাকের পুঁটুলি । কেন? গাছের পাতা , মাটি সর্বত্রই তেনারা থাকেন। জোঁকের মুখে নুন, এক্ষেত্রে কাজে দেবে না , জোঁকের মুখে তামাকপাতা .. এটা ঠিক কথা হবে। পাহাড়ি বস্তু কিনা। 
এখবর চক্ষু গোচর হওয়ার পরে যথা সম্ভব অবাক হয়েছিলাম আর সে যে কি ভাবে রেখা পাত করেছিল মনে তা বুঝলাম বইখান পড়ার 20 বছর পরে অর্থাৎ 2015 এ যখন পাহাড় সম্পর্কে শুধু ওই দার্জিলিং এর ধারণা নিয়ে mountaineering এর বেসিক করতে গেলাম। শুধু তামাক পাতার কথা মনে ছিল। ফলে , ইউমসাং থেকে bc এর যাত্রা শুরু হওয়ার আগে একদিন গেলাম চকবাজার মার্কেটে । জামা কাপড় বা ফ্যাশন দুরস্ত কোনো দোকানে না। পাতি, স্রেফ, পাতি তামাকের দোকানে । এক গোর্খা কাকু পাতা নিয়ে আধো আলো আধো ছায়ায় বসে আছে। স
চারদিকে সবজি বাজার , ভান্ডার ইত্যাদি ইত্যাদি। সেখানে গিয়ে মিনমিন করে তামাকপাতা লাগবে দু প্যাকেট শুনে চারপাশের লোক জনের ভিরমি খাবার অবস্থা। বলে কি? এক জন তো বলেই দিলো হিন্দিতে , যে বিড়ি অবধি ঠিক ছিল এটা কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। এই বার সগর্বে গর্জন করে জানান দিলাম কারণের। ট্রেক শুরু হবে তাই বাঁচতে গেলে তামাক চাই। লোক জনের কৌতূহল শেষ। তামাক নিয়ে চুপি চুপি ফিরলাম। মনে মনে প্ল্যান সবাইকে যখন জোঁক ধরবে আমার আর কিছু হবে না বরং ত্রাতা হয়ে উঠব। আহা, ভাবতেই নিজেকে কেমন কিং আর্থার মনে হলো।  
যথারীতি ট্রেক শুরু হলো । বাকিম অবধি যাওয়া পর্যন্ত চিৎকার চেঁচামেচি হল্লা গুলা ...সে এক প্রকার  কুরুক্ষেত্র। মাঝে একবার উল্টে পড়লাম bagpack নিয়ে , একদম আক্ষরিক অর্থেই উল্টে পড়া । বসে ছিলাম এক পাথরের ওপরে , ব্যাগ গেল উল্টে ,সাথে আমিও। charokhane chit। 
Bagpack খুলে তাড়াতাড়ি তামাক বুর করে পাউডারের মতো সারা গায়ে মোজার ভেতরে দিলাম। ঘাড়ে মাথায় ও। এই বার টুপিখান পড়লাম। আয় দেখি কে কি করবি। বাকিম পৌঁছে দেখি সবার হালত খারাপ জোঁক কিস্যায়। আমি বেশ রাজার মতো ঘুরে বেড়ালাম। kachuya টেন্ট ছিল আমাদের। চারদিকে তামাক ছড়ালাম। দেখি, মেয়েদের লাইন লেগেছে আমার সাথে টেন্ট এ থাকার জন্য। আহা , ছেলে হলে গর্বে মাথা উঁচু হয়ে যেত 😉 ।
তামাক পাতা , জিন্দাবাদ। 
পুনঃশ্চঃ: আমাদের মধ্যে সবথেকে সৌখিন মেয়েটিকে জোঁক বাবাজি ধরেছিল। বুঝে গেছিলো যে এ ঘুরতে এসেছে। আর রোজ রোজ না হলেও তিন রকমের ক্রিম ঘষে মুখে । যদি এই চান্সে জোঁক জন্ম সার্থক করা যায়।  চুমু খেয়ে কলাগাছ
তেনার ছবি দেওয়া গেল। 

Comments

Popular posts from this blog

চুমকি ঘটি গঙ্গা জল

Action;Camera; Trek towards Sandakphu (part 1)

Ready, Steady ,. .......